SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account


জান না কি জীব তুমি,                   জননী জন্মভূমি,
                   সে তোমায় হৃদয়ে রেখেছে।
থাকিয়া মায়ের কোলে,             সন্তানে জননী ভোলে,
                  কে কোথায় এমন দেখেছে ৷। 
ভূমিতে করিয়ে বাস,                   ঘুমেতে পুরাও আশ,
                    জাগিলে না দিবা বিভাবরী ।
কতকাল হরিয়াছ,                         এই ধরা ধরিয়াছ,
                       জননী জঠর পরিহরি ৷।  
 যার বলে বলিতেছ,                       যার বলে চলিতেছ,
                       যার বলে চালিতেছ দেহ।
যার বলে তুমি বলী,                         তার বলে আমি বলি,
                        ভক্তিভাবে কর তারে স্নেহ ৷৷
মিছা মণি মুক্তা হেম,                      স্বদেশের প্রিয় প্রেম,
                           তার চেয়ে রত্ন নাই আর ।
সুধাকরে কত সুধা,                           দূর করে তৃষ্ণা ক্ষুধা,
                           স্বদেশের শুভ সমাচার ৷।
ভ্রাতৃভাব ভাবি মনে,                          দেখ দেশবাসীগণে,
                             প্রেমপূর্ণ নয়ন মেলিয়া ।
কত রূপ স্নেহ করি,                          দেশের কুকুর ধরি,
                           বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া ৷৷
স্বদেশের প্রেম যত,                            সেই মাত্র অবগত , 
                           বিদেশেতে অধিবাস যার ।
ভাব-তুলি ধ্যানে ধরে,                         চিত্রপটে চিত্র করে, 
                            স্বদেশের সকল ব্যাপার ৷।
স্বদেশের শাস্ত্রমতে,                             চল সত্য ধর্মপথে,
                        সুখে কর জ্ঞান আলোচন ।
বৃদ্ধি কর মাতৃভাষা,                           পুরাও তাহার আশা,
                          দেশে কর বিদ্যা বিতরণ ৷।
[সংক্ষেপিত]
 

Content added By


ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কাঁচড়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হরিনারায়ণ দাশগুপ্ত। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কবিতায় মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগ – উভয়েরই লক্ষণ দেখা যায়। তাই তিনি বাংলা সাহিত্যে যুগসন্ধিক্ষণের কবি হিসেবে পরিচিত। বিচিত্র অলংকারের ব্যবহার এবং ব্যঙ্গ-কৌতুক তাঁর কবিতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাঁর পারিবারিক ও সামাজিক জীবনই তাঁকে বিদ্রূপপ্রবণ করে তুলেছিল । তিনি ভারতীয় ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র ‘সংবাদ প্রভাকর' পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুর পর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পাদনায় তাঁর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: রামচন্দ্র গুপ্ত সংগৃহীত ‘কবিতার সংকলন', বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘কাব্যসংগ্রহ' এবং কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন সম্পাদিত ‘সংগ্রহ”। তিনি ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩এ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
 

Content added By

জীব - প্রাণী। এ কবিতায় ভারতবাসীকে বোঝানো হয়েছে ।
পুরাও - পূর্ণ কর ।
বিভাবরী - রাত্রি।
হরিয়াছ - হরণ করিয়াছ। ‘এখানে যাপন করেছ অর্থে ব্যবহৃত
জঠর - পেট। উদর।
পরিহরি - পরিহার করে ।
বলিতেছ - বল লাভ করছ ।
চালিতেছ - চালাচ্ছে । 
বলী - বলবান ।
হেম - স্বর্ণ
সুধাকর - চাঁদ।
সুধা - জ্যোৎস্না। অমৃত।
অধিবাস - বাসস্থান।
 

Content added By

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের “স্বদেশ” কবিতাটি সংক্ষেপিত আকারে সংকলিত হয়েছে ‘কবিতা সংগ্রহ' গ্রন্থ থেকে। এটি একটি স্বদেশপ্রেমের কবিতা। কবি স্বদেশকে মাতৃরূপে কল্পনা করে সন্তানতুল্য দেশবাসীকে তার প্রতি যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মাতৃভূমির শক্তিতে বলীয়ান স্বদেশবাসীকে তিনি ভক্তিভাব নিয়ে স্বদেশের কল্যাণে নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কবির স্বাজাত্যবোধ এ কবিতায় এমনই প্রখর যে, তিনি বিদেশের মূল্যবান-কিছু ত্যাগ করেও স্বদেশের তুচ্ছ-কিছুকে আঁকড়ে ধরতে বলেছেন। কবির কাছে, স্বদেশের শুভ বা কল্যাণ মণি মুক্তার চেয়ে দামি । নিজ দেশের প্রতি মমত্ব ও প্রেম সে-ই যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পারে যে বিদেশে থাকে। দেশবাসীর পক্ষে সত্য ধর্মপথে চলে মাতৃভাষা চর্চা, জ্ঞান অন্বেষণ ও বিদ্যা বিতরণের মাধ্যমেই স্বদেশমাতার আশা পূর্ণ করা সম্ভব ।

Content added By